Welcome to High Commission's new website.


ফিজি সম্পর্কে অভিবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য সাধারণ প্রশ্নোত্তর

সাধারন ও ভৌগলিক তথ্যাদি


১। ফিজি দেশটি কোথায় অবস্থিত?

উত্তরঃ ফিজি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। ছোট বড় ৩০০ টি দ্বীপের সমন্বয়ে দেশটি গঠিত। প্রধান প্রধান দ্বীপ বা শহরগুলো হচ্ছে—সুভা (রাজধানী), নাদি, লোটোকা, সিগাটোকা, লামাসা, সাবু সাবু। 

২। দেশটির লোকসংখ্যা কত? কোন কোন জাতিগোষ্টির বসবাস রয়েছে ফিজিতে?

উত্তরঃ আনুমানিক লোক সংখ্যা ৯ লক্ষের মতো। জনগোষ্টির প্রায় ৫৫% ফিজিয়ান যাদেরকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় এতোকি। এছাড়াও ৪০% ভারতীয় বংশোদ্ভূত ফিজিয়ান এবং বাকি ৫% অন্যান্য জাতিগোষ্ঠির।

৩। ফিজির আবহাওয়া কেমন?

উত্তরঃ বাংলাদেশের মতো ট্রপিক্যাল আবহাওয়া গরমের সময়ে সবোর্চ্চ ৩৫—৩৬ ডিগ্রি এবং শীতে ১৫—২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

৪। ফিজির ভাষা কি?

উত্তরঃ প্রায় সবাই ইংরেজি এবং অনেকে হিন্দিতে কথা বলে। 

৫। ফিজিতে বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা কত?

উত্তরঃ বেসরকারি হিসেবে প্রায় ৫,০০০ বিদেশি শ্রমিক বৈধভাবে ফিজিতে কাজ করে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক। এছাড়াও ভারত, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া এবং চীন থেকে বিদেশি শ্রমিক আসে। 

 

ফিজির অর্থনীতি

৬। ফিজি কি উন্নত দেশ? এর অর্থনীতি সম্পর্কে সাধারন ধারনা। 

উত্তরঃ না। এটি একটি মধ্যম আয়ের দেশ। ফিজির মাথাপিছু আয় ৫০৫৭ মার্কিন ডলার (সুত্রঃ বিশ্বব্যাংক, ২০২০). জিডিপি প্রবৃদ্ধি— ৭.১%( সুত্রঃ এডিবি, ২০২২)। মোট জিডিপি— ৪.৩৭৬ বিলিয়ন ইউএসডি. 

৭। ফিজি’তে সর্বনিম্ন বেতন কত?

উত্তরঃ ফিজি ডলার ৩.১১ (ঘন্টা প্রতি)। আগামী জানুয়ারী ২০২২ থেকে সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারন করা হয়েছে ৪ ফিজিয়ান ডলার (প্রতি ঘন্টা) ।

৮। ১ ফিজি ডলার সমান কত বাংলাদেশি টাকা?

উত্তরঃ ৪১ টাকা। (বিভিন্ন সময়ে এই রেট পরিবর্তন হয়।)

 

ফিজি’র ইমিগ্রেশন ও বিদেশী শ্রমিকের কাজ করার সুযোগ

৯। ফিজিতে যেতে কি ভিসা নিতে হয়?

উত্তরঃ বাংলাদেশি পাসপোর্টে ফিজি ভ্রমনে কোন ভিসা প্রয়োজন হয় না। বিমানবন্দরে অন এরাইভাল ভিসা নিতে হয়। যার মেয়াদ তিন(৩) মাস। তিন মাস পরে অবশ্যই ফিজি ত্যাগ করতে হবে। নতুবা দেশটির আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অবৈধভাবে ফিজিতে অবস্থানের কারনে আপনাকে গ্রেফতার করে ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাবে।

১০। ফিজিতে কি বিদেশি শ্রমিকদের কাজ করার সুযোগ আছে?

উত্তরঃ নিজস্ব দক্ষ কমীর্ স্বল্পতার কারনে ফিজি বিদেশি শ্রমিকদের কাজ করার সুযোগ দিয়ে থাকে। দেশটি শুধুমাত্র দক্ষ কমীর্ গ্রহণ করে থাকে। অদক্ষ কমীর্ কোন ভাবেই গ্রহণ করে না। যথাযোগ্য কাজের জন্য ও হয়রানী এড়াতে সকল আগ্রহী শ্রমিককে চাকুরীর চুক্তি সম্পাদন করে ফিজিতে আসার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। 

১১। বিদেশি শ্রমিকদের  ফিজিতে কাজ করার জন্য নূন্যতম যোগ্যতা কি কি?

উত্তরঃ বিভিন্ন কোম্পানী তাদের চাকরীর জন্য বিভিন্ন যোগ্যতা নির্ধারণ করে থাকে। তবে সর্বনিন্ম যোগ্যতা হচ্ছে— নূণ্যতম ৮ম শ্রেনি পাস, বাংলা ভাল ভাবে লিখতে ও পড়তে জানতে হবে, সংশ্লিষ্ট কাজে ২/৩ বছরের অভিজ্ঞতা, ইংরেজি পড়তে জানতে হবে, হিন্দি ভাষায় কথা বলা এবং বুঝতে পারলে সেই প্রার্থী বেশি যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

১২। ওয়ার্ক পারমিট এর মেয়াদ কত দিন? 

উত্তরঃ স্বল্প সময়ের ওয়ার্ক পারমিট বলতে ০১ বছরের সময়কে বুঝায়। এর মেয়াদ ১-৩ বছরের হয়। মেয়াদ শেষে কোম্পানী এবং কর্মীর্ উভয়ের সম্মতিতে ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ বাড়ানো হয়। 

১৩। ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন করা কার দায়িত্ব?

উত্তরঃ কোম্পানী নিজ দায়িত্বে ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন করবে। এর জন্য কমীর্কে কোন টাকা দিতে হবে না। তবে, মেয়াদ শেষের ৩-৪ মাস আগে কোম্পানীকে বিষয়টা মনে করিয়ে দেয়া কমীর্র দায়িত্ব। 

 

কি কি পেশায় কাজের সুযোগ আছে ও কি জানা প্রয়োজন

১৪। ফিজিতে কোন কোন পেশায় কাজের সুযোগ আছে?

উত্তরঃ বিভিন্ন পেশার চাহিদা রয়েছে। তবে, নির্মাণ শিল্পে (কারপেন্টার, মেসন, টাইলস মিস্ত্রি, ব্রিক লেয়ার, পেইন্টার ও আরো অনেক), ওয়েল্ডার, গার্মেন্টস, ড্রাইভিং এবং কৃষি খাতে বেশি পরিমাণ কাজের সুযোগ আছে। 

১৫। এক কোম্পানীতে কাজ করতে গিয়ে কি নির্ধারিত সময়ের আগে দেশে ফিরে আসা যায়?

উত্তরঃ চুক্তি অনুযায়ী মেয়াদ পূর্তির আগে কোন কর্মীর্ দেশে ফিরে আসতে চাইলে তাকে নিচ খরচে দেশে ফিরতে হবে। তবে মেয়াদ শেষ হলে এবং কোন কারণে যদি কোম্পানী কর্মীর্ ছাটাই করে তাহলে কোম্পানী দেশে ফিরে যেতে বিমান ভাড়া বহন করে।

১৬। কোম্পানী পরিবর্তন করা যাবে কিনা?

উত্তরঃ চুক্তির সময়কালে কোন অবস্থাতেই কোম্পানী পরিবর্তন করা যাবে না। তবে, কোন কারণে যদি কোম্পানীর হাতে কাজ না থাকে এবং কোম্পানী যদি ছাড়পত্র দেয় তাহলে অন্য কোম্পানীতে কাজ করার সুযোগ আছে। অন্য কোম্পানীতে কাজ করার আগে অবশ্যই ইমিগ্রেশন থেকে ছাড়পত্র বা অনুমতি নিতে হবে। ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে অনুমতি ব্যতিত কোম্পানী পরিবর্তন করলে তা অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে।  

১৭। কোম্পানী কি কি সুবিধা প্রদান করে?

উত্তরঃ শেয়ার করে থাকার জায়গা, খাবার তৈরীর জিনিসপত্র, এবং বাসা থেকে কাজের জায়গা এবং বাসায় ফেরত আনার জন্য কোম্পানী পরিবহনের ব্যবস্থা করে থাকে। পানি, বিদ্যুৎ ও গাসের বিল কোম্পানী বহন করে। তবে এসব সুবিধা চুক্তিতে থাকা বাঞ্চনীয়। 

১৮। কোম্পানী কি খাওয়ার জন্য আলাদা টাকা দেয়?

উত্তরঃ কিছু কোম্পানী শুধুমাত্র দুপুরের খাওয়ার জন্য মিল এলাউন্স দেয়। অন্য সময়ের খাবার নিজেদের রান্না করে খেতে হয়। এ বিষয়ে চুক্তির মধ্যে উল্লেখ থাকে। 

১৯। কত টাকা বেতন পাওয়া যায়?

উত্তরঃ এটা নির্ভর করবে কোম্পানী এবং কমীর্র মধ্য চুক্তির দ্বারা। সাধারনত ৭৫০-১০০০ফিজি ডলার এর মধ্যে বেতন পাওয়া যায়। বেশি দক্ষরা আরো বেশি বেতন পায়। 

২০। বিদেশি শ্রমিকরা চিকিৎসার জন্য কি ধরনের সুবিধা পায়?

উত্তরঃ সাধারণ জ্বর, ঠান্ডা, কাশির জন্য কোম্পানী চিকিৎসার খরচ প্রদান করে থাকে। সরকারি হাসপাতালে ফি দিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা যায়।

২১। ফিজিতে থাকা ও খাওয়ার খরচ কত?

উত্তরঃ চুক্তি মোতাবেক কর্মীদের থাকার কোন খরচ নেই। খাবার যদি এক সঙ্গে রান্না করা যায় তাহলে ২০০-২৪০ ফিজি ডলারের মধ্যে মোটামুটি খাবারের জন্য খরচ পড়বে। 

 


যা আপনাকে জানতে হবে

২২। ফিজিতে যেতে কি কি খরচ কর্মীর বহন করতে হয় এবং কত টাকা খরচ হয়?

উত্তরঃ যাওয়ার বিমান ভাড়া, মেডিকেল, বিএমইটি হতে ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স এর ফি, এজেন্ট এর লাভ সহ আনুমানিক ২,০,০০০-২৫,০০০০ টাকা খরচ হয়। বিমানের ভাড়া কম বেশি হলে এই খরচের পরিমাণও কম বেশি হতে পারে। তবে কোন মতেই ২,৭৫,০০০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। 

২৩। বাংলাদেশে কি টাকা পাঠানো যায়?

উত্তরঃ বৈধভাবে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানিগ্রাম দিয়ে টাকা পাঠানো যায়। অবৈধভাবে টাকা পাঠালে এবং যদি ঐদেশের সরকার তা জানতে পারে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।  

২৪। বিদেশি কমীর্দের জন্য কি প্রভিডেন্ট ফান্ড বাধ্যতামূলক?

উত্তরঃ বাধ্যতামূলক না। কোম্পানী চাইলে এই ধরণের ফান্ডের ব্যবস্থা করতে পারে। 

 


কনস্যুলার ও অন্যান্য আইনগত সমস্যার জন্য কি করবেন

২৪। ফিজি থেকে পাসপোর্ট বা অন্য কোন কনসুল্যার সেবা কিভাবে পাওয়া যায়?

উত্তরঃ ফিজিতে বাংলাদেশের কোন দুতাবাস বা অফিস নেই। বাংলাদেশ হাইকমিশন, ক্যানবেরা থেকে ফিজিতে অবস্থানরত সকল বাংলাদেশিদের কনসূল্যার সেবা প্রদান করা হয়। সকল প্রকার সেবার জন্য বাংলাদেশ হাইকমিশন, ক্যানবেরার ওয়েবসাইটে গিয়ে নির্ধারিত ইমেইল বা ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

২৫। মালিক পক্ষের সাথে কোন বিষয়ে সমস্য হলে প্রতিকার পাওয়ার উপায় কি?

উত্তরঃ মালিক পক্ষের সাথে কোন সমস্যা হলে সরাসরি কোম্পানীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সাথে কথা বলুন। সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করুন। তাতে যদি ব্যর্থ হোন তাহলে, বাংলাদেশ হাইকমিশনের লেবার উইং এর সাথে যোগাযোগ করুন। কোন অবস্থাতে ফিজির সরকারি বা বেসরকারি অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করবেন না। 

২৭। ফিজিতে অবস্থানরত অভিবাসী ও প্রবাসীদের কোন সংগঠন আছে কি? তাঁরা শ্রমিকদের বিপদে কোন পরামর্শ/ সহায়তা দিতে পারেন কি?

উত্তরঃ বাংলাদেশ ফিজি এসোসিয়েশন নামক একটি মাত্র প্রবাসী ও অভিবাসীদের সংগঠন রয়েছে। এই সংগঠনের অন্যতম কাজ অভিবাসী শ্রমিকদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করা। 

২৮। কিভাবে/ কোন পদ্ধতিতে হাইকমিশনের সাথে যোগাযোগ করা যাবে?

উত্তরঃ বিদেশে অবস্থানকালীন সময়ে প্রবাসীদের সবসময় সংশ্লিষ্ট দুতাবাসের সাথে যোগাযোগ রাখা উচিত।  পাশে উল্লেখিত বাংলাদেশ হাইকমিশন, ক্যানবেরার যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রবাসীরা অফিস টাইমের মধ্যে তাদের কাঙ্খিঁত সেবা গ্রহণ করতে পারে। 

 

ভূয়া এজেন্ট বা দালাল থেকে সাবধান

২৬। দালাল বা এজেন্টদের মিথ্যা আশ্বাসে বিশ্বাস করবেন না। আপনার যেকোন প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমাদের কাছে প্রশ্ন করতে পারবেন। আমরা আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব। মোবাইল নম্বর: +৬১৪১৬২৮৫০৬৯

২৭। ফিজি থেকে কোন ভাবেই অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডে যাওয়া সম্ভব নয়। কেউ যদি আপনাকে আশ্বাস দেয়, ফিজি থেকে অন্য কোন দেশে নিয়ে যাবে, বুঝবেন সে মিথ্যা বলছে এবং আপনি প্রতারিত হতে পারেন। এই সকল দালাল বা এজেন্ট এর বিরুদ্ধে নিকটস্থ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাতে রিপোর্ট করুন।

২৮। কোন অবস্থাতেই বিএমইটির স্মার্ট কার্ড/ ইমিগ্রেশন কার্ড ব্যতিত ফিজিতে আসবেন না। ইমিগ্রেশন কার্ড ব্যতিত অন্য কোন উপায়ে আসার চেষ্টা করবেন না। অন্যথায় প্রবাসে আপনার কোন সমস্যা হলে, সহায়তা প্রদান বিঘ্নিত হবে।  

২৯। পাসপোর্ট এবং ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ শেষ হওযার আগেই তা নবায়ন করুন। বৈধ থাকুন। নিজের ও দেশের সম্মান বজায় রাখুন। 

আপনার সকল ধরনের আইনগত ও অন্যান্য কনসুল্যার সেবা পেতে নিচের যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে পারেন।